ইথোলজিঃ উদ্দীপকের প্রতি সাড়া দেওয়া প্রতিটি জীবের বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাপেক্ষে একটি প্রাণীর সাড়া দেওয়া বা প্রতিক্রিয়াকে প্রাণীর আচরণ বলে। সম্পূর্ণ দেহের সঞ্চালন বা অংশবিশেষের সঞ্চালন, দেহভঙ্গি, মুখের ভঙ্গি, স্বর উৎপাদন ভঙ্গি এমনকি বর্ণের পরিবর্তন, গন্ধ সৃষ্টি প্রভৃতি আচরণের অন্তর্গত। জীববিজ্ঞানের যে শাখায় প্রাণীর আচরণ
সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, তাকে আচরণবিদ্যা বা ইথোলজি (Ethology; একি ethos = আচরণ এবং logos=জ্ঞান) বলে।
কোনো আচরণগত সাড়ার ব্যাপ্তি ও প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটার পেছনে বিভিন্ন উদ্দীপনার সম্মিলন কাজ করে। বিভিন্ন উদ্দীপনার এ সম্মিলন মোটিভেশন (motivation) বা প্রেরণা নামে পরিচিত। অনেক প্রজাতির স্ত্রী সদস্য বছরের নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অন্য সময়ে জননে অংশ নেয় না। এ সময়কালটি প্রাণিদেহে রজঃচত্রের (এস্ট্রাস চক্র) সঙ্গে জড়িত থাকে। তখন নিষেক, গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান ঐ প্রাণীর জন্য নিরাপদ ও অনুকূল। এ আচরণগত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জৈবনিক ছন্দ (biological rhythms)। আচরণগত পরিবর্তনে সহায়ক এ ধরনের সংকেতকে সাংকেতিক উদ্দীপনা (sign stimuli) নামে অভিহিত করা হয়। উৎপত্তি বা কাজের ভিত্তিতে সাংকেতিক উদ্দীপনা তিন রকমঃ মোটিভেশনাল, রিলিজিং এবং টার্মিনেটিং উদ্দীপনা।
মোটিভেশন (Motivation) বা প্রেরণাদায়ক উদ্দীপনাঃ
এ উদ্দীপনা অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক হতে পারে। দিনের সময়কাল বেড়ে গেলে পাখির বিচরণ পরিসীমা রক্ষা ও জনন আচরণ প্রভাবিত হয়। এটি বাহ্যিক উদ্দীপনা। অন্যদিক, শীতযাপনকালে আহার অন্বেষণের ভয়ংকর বাস্তবতার কথা চিন্তা করে দেহে সঞ্চিত চর্বি থেকে শক্তি আহরণ করার বিষয়টি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনা।
রিলিজিং (Releasing) বা নির্গমণ উদ্দীপনাঃ রিলিজার হচ্ছে একটি সাধারণ উদ্দীপনা। কোনো প্রজাতির এক সদস্য যখন একই প্রজাতির আরেক সদস্যের উদ্দেশে আচরণগত সাড়ার অংশ হিসিবে ক্রমাগত (অনুক্রমিক) উদ্দীপনার প্রকাশ ঘটায় তখন তাকে রিলিজার (releasers) বলে। বিখ্যাত আচরণবিজ্ঞানী লরেঞ্জ (Lorenz) সর্বপ্রথম Releaser শব্দ প্রয়োগ করেন এবং আরেক পৃথিবীখ্যাত বিজ্ঞানী টিনবারগেন (Tinbergen) আচরণে এর ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। হিরিংগাল (গাংচিল, Larus argentatus)-এর খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের সময় রিলিজারের কার্যকারিতার বিষয়টি জানা যায়। হেরিং গাল যখন শাবকদের জন্য খাবার নিয়ে আসে শাবক তখন পিতা-মাতার হলদে রংয়ের নিম্নচোয়ালে অবস্থিত একটি লাল ফোঁটায় ঠোকর মেরে মাছ উপরে দেওয়ার সংকেত দেয়। উগরে দেওয়া মাছ শাবক হেরিংগাল গলাধ:করণ করে। বিজ্ঞানী টিনবারগেন ও পারডেক (Tinbergen and Perdeck) এ প্রক্রিয়ার রহস্য উদ্ঘাটনে নিয়ন্ত্রিত ও ধারাবাহিক গবেষণা করেন। তাঁরা কাগজের শক্ত বোর্ড দিয়ে পূর্ণবয়স্ক হেরিংগালের মাথা বানিয়ে তাতে ঠোঁটের মধ্যে কড়া বৈসাদৃশ্য প্রদর্শনকারী (contrast) রংয়ের ফোটা মেখে লক্ষ করেন যে ঠোঁটের ফোটাই খাদ্য চেয়ে আকুতি জানানোর একমাত্র রিলিজার। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা আরও লক্ষ করেন যে পৃ পবয়স্কের ঠোঁটে একটিমাত্র ফোঁটার বদলে তাদের তৈরি একটি দন্ডের মধ্যে দু-তিনটি আড়াআড়ি দাগ দিয়ে শাবকের চোখের সামনে ধরলে আরও বেশি ঠোকরাতে থাকে।
টারমিনেটিং (Terminating) বা সমাপ্তিকরণ উদ্দীপনাঃ
যে উদ্দীপনায় আচারণগত সাড়ার সমাপ্তিকরণ ঘটে তাকে টারমিনেটিং উদ্দীপনা বলে অভিহিত করা হয়। এটি বাহ্যিকও হতে পারে, অভ্যন্তরীণও হতে পারে। পাখির দৃষ্টি উদ্দীপনা (visual stimuli) যখন একটি বাসা নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে মনে করে তখন পাখি বাসা নির্মাণ বন্ধ করে দেয়। এটি হচ্ছে বাহ্যিক টারমিনেটিং উদ্দীপনা। অন্যদিকে, ভরপেট না হওয়া পর্যন্ত (অর্থাৎ পাকস্থলি ভরে না খাওয়া পর্যন্ত) যাওয়া চালিয়ে যাওয়া, পাকস্থলি পূর্ণ হলে অর্থাৎ পরিতৃপ্তির পর খাওয়া বন্ধ করা হচ্ছে অন্তঃস্থ টারমিনেটিং উদ্দীপনা।
ট্যাক্সেস (Taxes)
(দিকমুখি উদ্দীপনা বা উদ্দীপনা মাত্রার তীব্রতার প্রতি একটি জীবের সহজাত আচরণগত সাড়া দেওয়াকে ট্যাক্সিস (taxis, গ্রিক tackst = arrangement বা বিন্যাস; বহুবচনে ট্যাক্সেস, taxes) বলে। এটি অন্যতম সহজাত আচরণ এবং অভিযোজনযোগ্য ।
ট্যাক্সিসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ জীব অপরিবর্তনীয় সাড়া দান করে ।স্থানিক দিকমুখিতা প্রদর্শন করে দিকমুখিতায় সম্পূর্ণ দেহ জড়িত থাকে চলনের দিক অবিরাম বহিঃউদ্দীপনায় পরিচালিত হয় এবং দিকমুখি চলন সরাসরি উদ্দীপনা শক্তির সমানুপাতিক ।
ট্যাক্সিসের প্রকারভেদ
বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে সাড়াদানের ভিত্তিতে ট্যাক্সিসের প্রকারভেদ করা হয়ে থাকে, যেমন- উদ্দীপনার উৎস, উদ্দীপনার বিষয়, সংবেদী অঙ্গের উপস্থিতি ইত্যাদি। প্রাণীর অবস্থান পরিবর্তন সব সময় উদ্দীপকের উৎসের সাথে নির্দিষ্ট কোণে সম্পাদিত হয় বা সরাসরি উৎসের দিকে কিংবা উৎস থেকে দূরে সরে যায়।
দেহের দিকমুখিতার ভিত্তিতে ট্যাক্সিস নিম্নোক্ত দুরকম :
পজিটিভ বা ধনাত্মক ট্যাক্সিস (Positive taxis) : এক্ষেত্রে প্রাণী উদ্দীপকের উৎসের দিকে ঘুরে যায় বা গমন করে।
নেগেটিভ বা ঋণাত্মক ট্যাক্সিস (Negctive taxis) : এক্ষেত্রে প্রাণী উদ্দীপকের উৎস থেকে দূরে সরে যায়
উদ্দীপনার উৎসের ভিত্তিতে জীবে নিম্নোক্ত বিভিন্ন ধরনের আচরণ দেখা যায়।
১.অ্যারোট্যাক্সিস (Acrotaxis) : জীব যখন অক্সিজেন ঘনত্বের পার্থক্যের কারণে সাড়া দেয়।
২. কেমোট্যাক্সিস (Chemotaxis) : জীব এক্ষেত্রে পরিবেশে রাসায়নিক ঘনত্বের তারতম্যের কারণে সাড়া দেয়।
৩. এনার্জি ট্যাক্সিস (Energy taxis) : এ ধরনের দিকমুখিতায় জীবকোষের অন্তঃস্থ শক্তির অবস্থা বিবেচনা করে সর্বোচ্চ বিপাকীয় কাজের দিকে সাড়া দেয়।
৪. এ্যাডিট্যাক্সিস (Gravitaxis) বা জিওট্যাক্সিস (Geotaxis) : এটি হচ্ছে জীবের অভিকর্ষজনিত সাড়াদান। বিভিন্ন প্রাণীর লার্ভা দশায় পজিটিভ ও নেগেটিভ দুধরনের গ্র্যাভিটাক্সিসই দেখা যায়।
৫. গ্যালভানো ট্যাক্সিস (Galvanotaxis) বা ইলেক্ট্রোট্যাক্সিস (Electrotaxis) : এ ক্ষেত্রে সাড়াদানের উৎস হচ্ছে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র (electrical field)।
৬. ম্যাগনেটোট্যাক্সিস (Magnetotaxis) : এটি চুম্বক ক্ষেত্রসংশ্লিষ্ট সাড়াদান ।
৭. ফোনোট্যাক্সিস (Phonotaxis) : এটি হচ্ছে শব্দের প্রতি সাড়া দিয়ে জীবের চলন ।
৮. ফটোট্যাক্সিস (Phototaxis) : এটি আলোর তীব্রতা ও দিকের প্রতি সাড়া দিয়ে জীবের চলন।
৯. রিওট্যাক্সিস (Rhcotaxis) : এটি হচ্ছে তরল পদার্থে প্রাণীর স্রোতজনিত ট্যাক্সিস।
১০. থার্মোট্যাক্সিস (Thermotaxis) : এটি জীবের তাপের ক্রমমাত্রা বরাবর প্রাণীর চলন।
১১. থিগমোট্যাক্সিস (Thigmotaxis) : এটি হচ্ছে দৈহিক স্পর্শজনিত ট্যাক্সিস।
ট্যাক্সিসের দিকমুখিতার ভিত্তিতে আচরণ নিম্নোক্ত ৫ রকম।
১. ক্লাইনোট্যাক্সিস (Klinotaxis) : যে সব প্রাণীতে এ ট্যাক্সিস ঘটে সে সব প্রাণীতে কোনো জোড় সংবেদ অঙ্গ থাকে না, বরং সংবেদগ্রাহী কোষগুলো সমগ্র দেহ জুড়ে, বিশেষ করে সম্মুখ অংশে অবস্থান করে। সম্মুখ অংশটি এদিক-ওদিক ঘুড়িয়ে উদ্দীপনার ব্যাপকতা যাচাই করে। সবদিক থেকে ব্যপকতার সমতা এলে প্রাণী সোজা চলতে শুরু করে। রোয়াই (blowfly) ও বাটারফ্লাই (butterfly)-এর লার্ভায় এ ধরনের ট্যাক্সিস দেখা যায়।
২. মনোট্যাক্সিসঃ ধরনের ট্যাক্সিসে প্রাণীর দিকমুখিতা থাকে কৌণিক (angular) ধরনের। যেমন-সূর্যের প্রতি সাড়া দিয়ে পিঁপড়ার চলন ।
৩. নেমোট্যাক্সিস (Mnemotaxis; Gk, meme = স্মৃতি) : এটি কোনো প্রাণীর স্মৃতিমূলক সাড়াদান। এসব প্রাণী কোথাও গেলে চলার পথের আশ-পাশের কোনো বস্তুকে চিহ্ন হিসেবে মনে রাখে, ফেরার সময় ওই চিহ্নগুলো মনে করে ফিরে আসে। দুএকটা স্মৃতিচিহ্ন উঠিয়ে নিলে প্রাণীর বাসায় ফেরা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
৪. টেলেট্যাক্সিস (Telotaxis) : এটি হচ্ছে শক্তিশালী উদ্দীপকের প্রতি সাড়াদান। এ ক্ষেত্রে প্রাণিদেহে জোড় সংবেদ অঙ্গ থাকে। একটি মৌমাছি যখন খাদ্যের খোঁজে চাক থেকে বের হয় তখন একদিকে সূর্য, অন্যদিকে ফুল-এ দুটি উদ্দীপক থাকে। এ দুই উদ্দীপকের মধ্যে ফুল-এর উদ্দীপনা বেশি হওয়ায় মৌমাছি ফুলে গিয়ে বসে, ভারসাম্য বজায় রেখে মধ্যপথে অগ্রসর হয় না।
৫. ট্রোপোট্যাক্সিস (Tropotaxis) : এটি হচ্ছে দুই বা ততোধিক সংবেদগ্রাহী অঙ্গে একটি উদ্দীপকের উদ্দীপনা একসঙ্গে গৃহীত হলে ভারসাম্যমুলক ট্যাক্সিস। এক্ষেত্রে প্রাণিদেহে জোড় সংবেদাঙ্গ উপস্থিত থাকে। মাছের উকুনে (fish louse) এ ধরনের ট্যাক্সিস দেখা যায়।
ট্যাক্সেসের অভিযোজনিক গুরুত্ব
ট্যাক্সেসের অভিযোজনিক গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন-প্রজাপতির দিকমুখিতা ও চলন শত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে; পিঁপড়া ও পাখির বাসায় ফেরার বিষয়টি ট্যাক্সিসের নিয়মে পরিচালিত হয়; এবং ঋণাত্মক ফটোট্যাক্সিসের ফলে মাছির লার্ভা অন্ধকার কোণে পিউপায় রূপান্তরিত হওয়ার সুযোগ পায়। এক কথায় বলতে গেলে, উদ্দীপনায় যথাসময়ে সঠিক সাড়া দিয়ে প্রাণী বংশবৃদ্ধি থেকে শুরু করে নীড় নির্মাণ, অপত্য যত্ন, আহার সংগ্রহ, শত্রুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে নির্বংশ হওয়া থেকে টিকে থাকে।
প্রতিবর্তী ক্রিয়া বা রিফ্লেক্স ( Reflexes)
রিফ্লেক্স বা প্রতিবর্তী হচ্ছে উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দেওয়ার সরলতম ধরন। একটি সরল উদ্দীপনার প্রতিও প্রতিবর্তীর মাধ্যমে দেহ বা দেহের কোন অংশ দ্রুত স্বয়ংক্রিয় সাড়া দেয়। প্রতিবর্তী হচ্ছে জটিল আচরণের সরলতম একক। এগুলো স্বয়ংক্রিয় অনৈচ্ছিক ও স্টেরিওটাইপড (stereotyped) ধরনের [স্টেরিওটাইপ অর্থ হচ্ছে কোনো কাজের অপরিবর্তনীয় পুনরাবৃত্তি হওয়া]। সাধারণত দেহের একটি অংশ এতে জড়িত থাকে। এটি উদ্দীপনার মাধ্যমে অবিরাম নিয়ন্ত্রিত হয় না। যেহেতু স্নায়বিক প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতি, রিফ্লেক্স তাই উৎপত্তিগতভাবে সহজাত। একটি রিফ্লেক্স সরাসরি উদ্দীপনা শক্তির সমানুপাতিক অর্থাৎ উদ্দীপনা যত শক্তিশালী হবে সুপ্তকাল (latent period) হবে তত কম, অন্যদিকে দুর্বল উদ্দীপনায় সুপ্তকাল হার কম উদ্দীপনা প্রয়োগ ও এর ফলাফলের মধ্যকার সময়কালটি সুপ্তকাল।
রিফ্লেক্সের প্রকারভেদঃ অনেক ধরনের হলেও সমস্ত রিফ্লেক্সকে প্রধানত দুধরনের রিফ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত করা যায় ঃ
টোনিক রিফ্লেক্স (Tonic reflex) : এ ধরনের রিফ্লেক্সে সৃষ্ট সাড়া দীর্ঘস্থায়ী হয়। পেশির দৃঢ়তা, ভঙ্গি ও ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে এ রিফ্লেক্স জড়িত থাকে ।
ফেজিক রিফ্লেক্স (Phasic reflex) : এ ধরনের রিফ্লেক্সে সৃষ্ট সাড়া ক্ষণস্থায়ী হয়। শরীর বাঁকানোর সময় এ রিফ্লেক্স জড়িত থাকে।
সহজাত আবেগ বা ইনসটিংক্টসঃ জন্মগত যে শক্তির সাহায্যে একটি প্রজাতির সকল সদস্য কোনো শিক্ষণ ছাড়া এবং উদ্দেশ্য ও ফলাফল সম্বন্ধে অবহিত না থেকে আত্মরক্ষা ও প্রজাতিরক্ষায় বংশ পরম্পরায় একইভাবে কাজ করে থাকে সেটাই ইনসটিংক্ট।
আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, ইনসটিংক্ট হচ্ছে নিসর্গ পরিচালিত এক শক্তি। ডারউইন (১৮৫৯), সর্বপ্রথম ইনসটিংক্টের বাস্তবমুখি একটি সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর সংজ্ঞা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গড়ে উঠা এক জটিল প্রতিবর্তী। ডারউইনের সংজ্ঞায় প্রচ্ছন্নভাবে হলেও এ বক্তব্যটি উঠে এসেছে যে উত্তরাধিকার সূত্রের মাধ্যমে আগত সাড়াদানের প্রক্রিয়ায় ইনসটিংক্টের প্রকাশ ঘটে। .
লরেঞ্জ (Lorenz, 1937) ডারউইনের বক্তব্য মেনে নিলেও কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে বলেন যে প্রত্যেক প্রাণিপ্রজাতির আচরণ কতকগুলো স্থায়ী (বা অপরিবর্তনীয়) অ্যাকশন প্যাটার্ণ (Fixed Action Pattem, FAP) নিয়ে গঠিত, আর FAP-গুলো হচ্ছে প্রজাতি-নির্দিষ্ট, অতএব জিনগতভাবে নির্ধারিত (genetically determined)। লরেঞ্জ আরও বলেছেন যে প্রতিটি FAP-ই ইনসটিংক্ট এবং প্রাণিদেহে অনেক ইনসটিংক্ট কেন্দ্র রয়েছে। (Tinbergen, 1951) লরেঞ্জ প্রদত্ত ধারণাকে সামগ্রিকভাবে সমর্থন জানিয়েছেন।যা হোক, সদ্যোজাত হেরিংগাল ও তার মায়ের মধ্যে যে সাড়া (response) প্রদর্শিত হয় তা থেকে ইনসটিংক্টের সুন্দর ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। ক্ষুধার্ত হেরিংগাল ছানা চাক্ষুষ উদ্দীপনার প্রতি সংবেদনশীল। অন্যদিকে, বাসায় ছানার উপস্থিতি পূর্ণাঙ্গ হেরিংগাল-এ চাক্ষুষ উদ্দীপনা (visual stimuli) হিসেবে কাজ করে। রিলিজিং উদ্দীপনার মাধ্যমে যে বার্তার সৃষ্টি হয় তা অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের একটি কেন্দ্রে বাহিত হয়। এ কেন্দ্রই সুনির্দিষ্ট বার্তার প্রতি নির্দিষ্ট সাড়া দেয়। এ প্রক্রিয়াটি সহজাত রিলিজিং পদ্ধতি (Innate Releasing Mechanism, IRM)। IRM নির্দিষ্ট পেশিকে সংকোচন ও প্রসারণের নির্দেশ দেয়। ফলে ছানার ঠোকর পড়ে পূর্ণাঙ্গ হেরিংগাল-এর ঠোঁটে অবস্থিত লাল ফোঁটার উপর। এটাই হচ্ছে স্থায়ী অ্যাকশন প্যাটার্ণ (FAP)।
FAP এর বৈশিষ্ট্যঃ
বিশ্বখ্যাত আচরণবিজ্ঞানী লরেঞ্জ (১৯৩২) প্রদত্ত মানদন্ড অনুযায়ী একটি FAP-কে অবশ্যই নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন
* ছাঁচসম্মত (Stereotypy) : আচরণ সব সময় একই রকম হবে।
* স্বার্বজনীনতা (Universality) : একটি প্রজাতির সকল সদস্যে এ আচরণ প্রদর্শিত হবে।
* ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বহির্ভূত (Independence of individual experience) : বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকলেও প্রজাতির সব সদস্যে একই আচরণ প্রকাশিত হবে।
* ব্যালিসটিকনেস (Ballisticness) : সাড়া একবার দেওয়া হলে পরিস্থিতির পরিবর্তন সাপেক্ষেও তা অপরিবর্তিত থাকে ।
* উদ্দেশ্যের একনিষ্ঠতা (Singleness of purpose) : একটিমাত্র কাজ করে ৷
টুনটুনি পাখির বাসা নির্মাণ
টুনটুনি পাখির বাসা বাঁধা ইনসটিংক্টের এক চমৎকার উদাহরণ। এক লম্বালেজি তরণী টুনটুনি সঙ্গী নির্ধারণ শেষে তার প্রথম নীড় বাঁধার কাজে সক্রিয় হলো। বেশ কয়েকটি গাছ ঘুড়ে খুঁজে দেখল কোথায় দুটি বড় ঝুলন্ত পাতা রয়েছে যেখানে বাসা বাঁধলে শাবকগুলো নিরাপদে বড় হবে। মনমতো গাছ-পাতা-জায়গা পেলে শুরু করে দেয় বাসা বাঁধা। পাতাদুটির কিনারা ঠোঁট দিয়ে ছিদ্র করে চটের বস্তা সেলাই করার মতো ছিদ্রগুলোর ভেতর দিয়ে মাকড়সার জাল, ককুন-এর রেশম প্রভৃতি দিয়ে সুতা বানিয়ে কিনারাগুলো আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে। সুতা যেন ছুটে না যায় সেজন্য বিশেষ উপায়ে গিঁট দিতে ভুলেনা টুনটুনি । টেনে-টুনে দেখে থলির মতো গড়নের বাসা। বাসার মেঝেয় ছোট ছোট ডালের টুকরা, ঘাস বিছিয়ে নরম গদির মতো করে তুলে। এখানে ডিম পাড়া হবে, শাবক পালিত হবে।
প্রথমবার যে টুনটুনি বাসা বানায় সে বয়স্ক পাখির নীড় বাঁধার কর্মকান্ড বা কৌশল সমন্ধে কিছুই জানে না। তা সত্ত্বেও যে বাসাটি বাঁধে সেটি নিখুঁত না হলেও শাবক লালনে চলনসই গণ্য হয়। টুনটুনি পাখির বাসা বাঁধার প্রক্রিয়া একটি ইনসটিংক্টিভ আচরণের সুলভ ও যথাযথ উদাহরণ।
সহজাত আচরণ বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়। এ কথার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় পরিযায়ী পাখিদের নির্দিষ্ট ঋতুতে বংশপরম্পরায় একই বিচরণ ভূমিতে সাময়িক ফিরে আসার মধ্য দিয়ে। পৃথিবীর অতিবিপন্ন (Critically Endangered, CR) একটি পাখি হচ্ছে চামচঠোঁটি কাদাখোচা (Spoon-billed Sandpiper, Eurynorhynchus pygmeus)। এটি প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চলে আহার ও আশ্রয় ও নিরাপত্তার জন্য রাশিয়া থেকে পরিযায়ী হয়। পরীযায়ী পাখি সহজাত আচরণকে কাজে লাগিয়ে বুঝে নেয় কোন সময় ও কোন পথে পরিযায়ী হতে হবে এবং এখানে এসে হাওর-বাওর-নদী ফেলে উপকূলীয় কাদাময় দ্বীপে হেঁটে হেঁটে আহার খুঁজতে হবে-এসব কর্মকান্ড সহজাত আচরণের বহিঃপ্রকাশ। পেটপুরে খেয়েদেয়ে নির্দিষ্ট সময়ে পুনরায় স্থায়ী বাসস্থানে ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এদের বাংলাদেশ সফরের সমাপ্তি ঘটে।
শীতের পাখির মাইগ্রেশন বা পরিযান
প্রত্যেক প্রাণীর জন্যই পরিবেশে কিছু না কিছু প্রতিকূল বিষয় থাকে। এসব বিষয় অনেক সময় ঋতুভিত্তিক দেখা দেয়। ঋতুগতভাবে পরিবর্তনশীল পরিবেশ মোকাবিলায় প্রাণী যে সব কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে তারই একটি হচ্ছে মাইগ্রেশন (migration) বা পরিযান । প্রাণী তখন অনুকূল পরিবেশের উদ্দেশে যাত্রা করে। (প্রকৃত অর্থে পরিযান বলতে উভয়মুখি চলাচলকে বুঝায় অর্থাৎ স্থায়ী বাসভূমি থেকে নতুন কোনো অনুকূল পরিবেশে যাত্রা এবং সেখানে সাময়িক বসবাসের পর পুনরায় স্থায়ী বসতিতে প্রত্যাগমন ) এরকম যাতায়াত সাধারণত একই পথ অনুসরণ করে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে সংঘটিত হয়। পাখির পরিযান এধরনের। পাখির জগতে পরিযান ব্যাপক বিস্তৃত। প্যালিআর্কটিক অঞ্চলের ৪০ শতাংশ পাখি-প্রজাতি পরিযায়ী। পাখিদের পরিযান বিজ্ঞানীদের কাছে আজও রহস্যাবৃত ঘটনা, তবে যে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ উল্লিখিত হয়েছে তা হচ্ছে-খাদ্যের স্বল্পতা, শীতের তীব্রতা, পূর্বপুরুষীয় বাসভূমিতে প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি।
স্থানীয় পরিযান সাধারণত কয়েকশ ফুট থেকে ১-২ মাইল পর্যন্ত হয়, যেমন- হিমালয়ান পার্ট্রিজ (একধরনের তিতির)। অন্যদিকে, আর্কটিক টার্ণ ১১ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে শীতকালে অ্যান্টার্কটিকার উপকূলে এসে হাজির হয় । কিছু পাখি মাটির সামান্য উপর দিয়ে উড়ে গেলেও সুশৃঙ্খল পরিযানের অংশগ্রহণকারী পাখি মাটি থেকে প্রায় ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার ফুট উচ্চকায় আন্দিজ ও হিমালয় পর্বতকেও অতিক্রম করে যায় পাখিরা সাধারণত একদিনে ৫-৬ ঘন্টা উড়বার পর খাদ্য ও পানীয়ের জন্য বিশ্রাম নেয়, কিন্তু গোল্ডেন প্লোভার পাখির বিরতিহীনভাবে উড়ে ১৪০০ মাইল দূরবর্তী দক্ষিণ আমেরিকায় পৌছার প্রমাণ আছে। পরিযানের সময় পাখিরা সৃশৃঙ্খল রীতি মেনে চলে। প্রথমে বয়স্ক পাখিরা পরিযায়ী হতে শুরু করে, পরে স্ত্রী ও তরুণরা অনুসরণ করে। ফিরতি অভিযানে তরুণরাই নেতৃত্ব দেয় বলে জানা গেছে। পরিযানের নিয়ম ও সময় সবসময় ঠিক থাকে। অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় কিছুটা ব্যতিক্রম না ঘটলে কিছু প্রজাতির পরিযান-সময় ও শীতভূমি পরিত্যাগ-সময় বছরের পর বছর প্রায় একই থাকে, দুএকদিন এদিক-ওদিক হতে পারে। তা ছাড়া, পাখিরা সবসময় একই পথ ধরে পরিযায়ী হয় এবং ঠিক আগের জায়গায় গিয়ে পৌঁছে।
পরিযানের গমনপথ : পরিযায়ী পাখিরা নিজস্ব গমনপথ ধরে এগিয়ে চলে । এ পথ অনেক সময় একই থাকে। পাখির বিভিন্ন গমন পথের মধ্যে রয়েছে সমুদ্র, উপকূলীয় নদী ও নদী-বিধৌত ভুখন্ড ও পার্বত্য পথ। সমুদ্র পথ সাধারণত সামুদ্রিক পাখিরা ব্যবহার করে। কিছু স্থলচর পাখি সমুদ্র পথে ৪০০ মাইল পর্যন্ত অতিক্রম করে যায়, কিন্তু মধ্যবর্তী কোন স্থানে দ্বীপ থাকলে তারা আরও বেশি পথ অতিক্রম করতে পারে। বিশেষ করে জলচর পাখিরা উপকূলীয় পথ ধরে পরিযায়ী হয়। সমতল থেকে পাহাড়ে এবং পাহাড় থেকে সমতলে গমনাগমনের সময় পরিযায়ী পাখি নদী ও নদীনি ভূখন্ডকে গমনপথ হিসেবে বেছে নেয়। এশিয়ার বড় নদীগুলো পরিযানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী । খুব কম পাখি অতিক্রম করে। পর্বতগুলো পরিযায়ী পাখিদের নির্দেশক চিহ্ন হিসেবে কাজ করে, তবে কিছু জলচর পাখিতে হি পর্বত অতিক্রম করতেও দেখা যায়। ঐ পাখিদের জন্য এটি একটি গমন পথ।
পরিযানের গুরুত্ব
উপকারী ভূমিকা : মাইগ্রেশনের ফলে পাখি আবহাওয়ার প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা পায়; বিচিত্র ও পর্যাপ্ত আহার পায় এবং পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা হ্রাস পায়; গ্রীষ্মে স্বদেশ ভূমিতে এসে উপযোগী ও নিষ্কন্টক জনন ক্ষেত্র ফিরে পায়, কম কষ্টে পর্যাপ্ত আহার পায়, তখন জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। বিভিন্ন প্রজাতির মিলনে জিন সংযুক্তির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
অপকারী ভূমিকা : মাইগ্রেশন পাখির জন্য বেশ বিরূপ প্রভাব ফেলে, যেমন— অনেক সময় বিরতিহীন ভ্রমণে ক্লান্ত অসংখ্য পাখি সমুদ্রে পড়ে মারা যায়; আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তনে, যেমন- প্রবল বর্ষণ, তুষারপাত ও ঝড়ে পড়ে বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী পাখি মৃত্যুবরণ করে; তরুণ পাখিরা দূর পরবাসে অনেক প্রাকৃতিক শত্রুর মুখোমুখি হয়; বৈদ্যুতিক তার ও লাইট হাউজ ছাড়াও অগনিত পাখি মানুষের শিকারে পরিণত হয়; এবং মানুষের শিকারে পরিণত হয়ে অকালে প্রাণ হারায়।
বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি
বাংলাদেশ প্রধানত শীতকালে পরিযায়ী পাখির আগমনে মুখরিত থাকে। সারা বছরই পরিযায়ী পাখির আনাগোনা অব্যাহত থাকে। এসব পাখি দেশের পাখি হতে পারে, আবার বিদেশিও হতে পারে। সময়কাল ভেদে এগুলো গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন পাখি নামে পরিচিত (কিছু পাখি আছে যা অন্যদেশে যাওয়ার আগে দুএকদিন বাংলাদেশে অবস্থান করার পর নির্দিষ্ট দেশে উড়াল দেয়। এসব পাখি ট্রানসিয়েন্ট পরিযায়ী। বাংলাদেশে যে সব বিদেশি পাখি পরিযায়ী হয় তার বেশির ভাগ আসে হিমালয় ও তার বাইরে থেকে। অনেক প্রজাতির আগমন ঘটে ইউরোপ ও দূরপ্রাচ্য (যেমন সাইবেরিয়া) থেকে। অর্থাৎ ইউরেশিয়া থেকে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ায় শীতে পাখি পরিযায়ী হয়। শরৎ ও বসন্তকালেও কিছু পাখির যাতায়াত চোখে পড়ে। আর দেশি পাখির পরিযান সারা বছরই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হতে থাকে। বাংলাদেশের প্রায় ৫০০ প্রজাতির স্থায়ী পাখি রয়েছে,অস্থায়ী বা বিদেশি পাখি প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৩০০। অনেক বিদেশি পরিযায়ী পাখি রয়েছে যা স্বদেশে বিপন্ন বা অতিবিপন্ন হয়ে আছে এমন পাখিও বাংলাদেশে এসে কিছু দিনের জন্যে হলেও স্বাচ্ছন্দে কাটিয়ে যায় (যেমন-Spoon- billed Sandpiper)। বাংলাদেশে হাঁস, রাজহাঁসসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলচর পাখিসহ অসংখ্য শিকারি পাখিও (চিল, বাজ) পরিযায়ী হয়। এসব পাখি দেশের বড় বড় হাওড়, নদী ও উপকূল জুড়ে বিস্তৃত থাকে। লক্ষ লক্ষ সদস্যের দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখির পাশাপাশি অদৃশ্য পতঙ্গভুক্ত পাখিরা বন-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায় । অক্টোবর-মার্চ মাস পর্যন্ত মাইগ্রেটরি পাখি দেখার ধূম পড়ে যায় । সমস্ত হাওর এলাকা পরিযায়ী পাখির জন্য সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে, আইনে বিশেষ বিধান করে এগুলো সুরক্ষারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপসংহার ঃ পাখি প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি। এদের পরিযান হচ্ছে একদিকে প্রাণিজগতের অন্যতম সর্বাপেক্ষা চমকপ্রদ, অন্যদিকে, অন্যতম রহস্যময় ঘটনা। শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ তা অবলোকন করেছে, নানাভাবে ব্যাখ্যা করেছে। একবিংশ শতাব্দীতেও এর রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি। কিসের আশায় ও কিসের নেশায় পাখা পরিযায়ী হয়, প্রাকৃতিক নির্বাচনের সেই নিগূড় রহস্য উন্মোচন করতে পারলে হয়তো মানব প্রজাতিও তা কাজে লাগাতে পারবে
মাকড়শার জাল (Spider Web)
মাকড়শার বৃত্তাকার জালক হচ্ছে অতি জটিল ও অপরিবর্তনীয় আচরণগত প্যাটার্ণের ফলশ্রুতি। মাকড়শার অস্তিত্ব রক্ষায় এ জাল মূল ভূমিকা পালন করে। জালটি উড়ন্ত শিকার ধরার ফাঁদ হিসেবে কাজ করে, জালের সুতার উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে মাকড়শা নিজে দৌড়াতে পারে ।
মাকড়শা বৃত্তের জাল বোনে রেশমি সুতা দিয়ে। উদরীয় বিশেষ সিল্ক গ্রন্থি (silk glands) থেকে ক্ষরিত পদার্থকে শতশত অণুনালিকাযুক্ত তিনজোড়া বুননকারী (spinnerets)-র মাধ্যমে সুতা নির্মাণ করা হয়। সিল্ক গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত স্ক্লেরোপ্রোটিন (sclcroprotein) থেকে সৃষ্ট সুতা বাতাসের সংস্পর্শে এসে শক্ত রেশমি সুতায় পরিণত হয় । একই ব্যাসের ইস্পাতের সুতা অপেক্ষা মাকড়শার সুতা বেশি শক্তিশালী। টান দিয়ে ছিঁড়তে গেলে ছেঁড়ার আগে এ সুতা এক-পঞ্চামাংশ পর্যন্ত লম্বা হতে পারেসাড়া পৃথিবীতেই মাকড়শা জাল বোনে, সময় লাগে আধ ঘন্টারও কম। মাঠে যেসব মাকড়শা বাস করে তাদের অধিকাংশই খুব ভোরে সুর্যোদয়ের সময় জাল বোনে। জালিকা বৃত্ত একটি নিয়ত গঠন- এতে রয়েছে কাঠামো frame), অরীয় স্পোক (radial spokes) এবং আঠাল প্যাচ (viscid spirals)। হ্যান্স পিটার্স (Hans Peters, 1939) সর্বপ্রথম মাকড়শার জাল বোনার ধাপ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
মাকড়শার জাল বোনার শুরুতে একটি Y-আকৃতির ভারা (রাজ মজুরদের ভারা) নির্মাণ করে, এরপর কাঠামো ও অরীয় স্পোক, এবং সবশেষে অন-আঠাল ও আঠাল প্যাঁচ সৃষ্টি করে। প্রত্যেক ধাপে সৃষ্ট জালকগুলো সঠিক কোণ ও দূরত্ব অনুসরণ করে নির্মিত হয়। এভাবে নিখুঁত কৌণিক বৃত্তাকার জাল নির্মাণ মাকড়শার সহজাত আচরণের অন্যতম উদাহরণ।
অপত্যের প্রতি যত্নঃ
ডিমপাড়া বা সন্তান ধারণ করা থেকে শুরু করে এদের লালন পালন এবং রক্ষণাবেক্ষণ মাতা বা পিতা কিংবা উভয়ের সহজাত আচরণ। শিশুর জন্মলাভ ও তাদের স্বনির্ভর হওয়া পর্যন্ত পিতামাতা কর্তৃক পরিচর্যা নেয়াকে অপত্যের প্রতি যত্ন- নেয়া বা Parental care বলে। মাছ, উভচর, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণীতে এরূপ আচরণ লক্ষ করা যায়।
মাছের অপত্য যত্নঃ
প্রাণী আচরণ গবেষণায় তিন-কাঁটা স্টিকলব্যাক (Three-spined stickleback, Gastrosteus aculeatus) যাছের গুরুত্ব অনেক। এ মাছের বিস্তৃতি দক্ষিণে কৃষ্ণ সাগর (Black Sea), দক্ষিণ ইতালি, আইবেরিয়ান পেনিনস্যুলা, উত্তর আফ্রিকা, পূর্ব এশিয়ায় জাপানের উত্তর অংশে, উত্তর আমেরিকা এবং গ্রীনল্যান্ডে। আচরণবিদ্যার অনেক গুরুত্বপূর্ণ MAT বিষয় এ মাছের আচরণের উপর ভিত্তি করে প্রণীত হয়েছে। প্রখ্যাত আচরণবিজ্ঞানী টিনবারগেন (Tinbergen) তিন- কাঁটা স্টিকলব্যাকের উপর গবেষণা করেছেন। তাঁর গবেষণার ভিত্তিতে এ মাছের অপত্যের প্রতি যত্নের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো।এক থেকে তিন বছর বয়সে তিন কাঁটা স্টিলব্যাক পরিণত ( mature) হয়। জননকাল ছাড়া অন্য সময়ে ঝাঁকবদ্ধ হয়ে বাস করে। বসন্তকালে অর্থাৎ জননকালে পরিণত স্টিকলব্যাকেরা দলহীন হয়ে উপকূলবর্তী অগভীর পানির জলাশয়ে নিজস্ব বিচরণ পরিসীমা নির্ধারণ করে সতর্ক পাহাড়ায় নিযুক্ত থাকে। কারও অনুপ্রবেশে হানাহানি না করে বিভিন্ন শারীরিক কসরত ও বর্ণ পরিবর্তন ঘটিয়ে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। বিচরণ পরিসীমা প্রতিষ্ঠার পর সেখানে বাসা নির্মাণ শুরু করে। বাসা নির্মাণে শুধু পুরুষ সদস্যই কাজ করে। বাসা নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গার তলদেশ থেকে মুখভর্তি বালু তুলে প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার দূরে নিক্ষেপ করে। এভাবে একটি অগভীর গর্তের সৃষ্টি হলে পুরুষ মাছ সূত্রাকার শৈবাল ও অন্য জলজ উদ্ভিদ, নুড়ি ও অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ জড়ো করে বৃক্ক থেকে ক্ষরিত এক ধরনের প্রোটিনজাত আঠালো পদার্থে আটকে দেয়। সকল ভিন-কাঁটা স্টিকলব্যাকের বাসার নির্মাণশৈলী এক হয় না, স্বতন্ত্র রুচির বিষয় মাছের বেলায় ও প্রযোজ্য । কোন কাঠামো কোন স্ত্রী মাছের পছন্দ হবে তারও ব্যাপার আছে। যা হোক, বাসাটি দুমুখ খোলা, মধ্যভাগ ফাঁকা ও সামান্য চওড়া ধরনের।
বাসা নির্মাণ শেষ হলে পুরুষ মাছ উজ্জ্বল বর্ণ ধারণ করে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় স্ত্রীমাছকে আকৃষ্ট করে বাসায় ঢুকিয়ে লেজটাকে ধাক্কা দিয়ে ডিম পাড়তে উদ্বুদ্ধ করে। ডিম পাড়া শেষ হলে পুরুষ মাছ অতিদ্রুত বাসায় প্রবেশ করে ডিমগুলোকে নিষিক্ত করে। একটি বাসায় দু-তিনটি স্ত্রীমাছ ডিম পাড়তে পারে। এরপর পুরুষ মাছটি পিতা ও মাতা উভয়ের ভূমিকা পালন করে ডিমের দেখা শোনা আরম্ভ করে।
নীড় ও নীড়ের ভেতর থাকা নিষিক্ত ডিমগুলো থেকে সুস্থ পোনা উৎপাদন, রক্ষা, যত্ন নেওয়া ও সবশেষে নিরাপদে পরিবেশে ফিরে যাওয়া অনুকূলে রাখতে পুরুষ মাছ সদাব্যস্ত থাকে। এ সময় বাসার কাছে নিজ প্রজাতির সদস্যসহ কোনো মাছ বা ক্ষতিকর প্রাণীর প্রবেশ রোধ করতে মাছ সদা তৎপর থাকে। ডিম ফোটার অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য স্টিকলব্যাক 'এক অদ্ভূত আচরণ করে (বাসায় প্রবেশ পথের সামনে মাথা নিচু করে তীর্যকভাবে অবস্থান নিয়ে বক্ষপাখনা সামনের দিকে সঞ্চালিত করে। এভাবে অক্সিজেন চাহিদা নিশ্চিত করতে পানিস্রোত অব্যাহত রাখে। এ প্রক্রিয়ার নাম ফ্যানিং (fanning)।
সাত-আটদিনের মধ্যে ডিম ফুটে পোনা বেরিয়ে বাসা ত্যাগ করতে শুরু করলে ফ্যানিং বন্ধ করে দেয়। পোনাগুলো পাহারা দেওয়ার সময় স্টিকলব্যাক আক্রমণাত্তক হয়ে উঠে। পোনার দল অটুট রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কোনো কারণে দলের কিছু পোনা দলছুট হলে পুরুষ মাছটি দ্রুত সেগুলোকে মুখে তুলে এনে মূলদলে ছেড়ে দেয়। দুসপ্তাহ পর পোনা দলবদ্ধ চলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে অতিযত্ন ও সতর্কতার মধ্যে রেখে বড় করে তোলা ভবিষ্যৎ বংশধরগুলোকে ছেড়ে নিজের পূর্ণবয়স্ক ঝাঁকে ফিরে যায়।
ব্যাঙের অপত্য যত্ন
ভবিষ্যৎ বংশধরের পরিস্ফুটন যেন নির্বিঘ্ন হয় সে উদ্দেশে সতর্ক-সযত্নে বাসা নির্মাণ করে ডিম পাড়া কিংবা সদ্য পরিস্ফুটিত বংশধর বেড়ে না উঠা পর্যন্ত পিতা-মাতার যে কোনো একজন বা উভয়কেই সঙ্গে থাকাকে অপত্য যত্ন বলে । অপত্য যত্ন অন্যতম সহজাত প্রবৃত্তি যা প্রায় সব প্রাণিগোষ্ঠীতেই কম-বেশি দেখা যায়। উভচরেও বিচিত্র অপত্য যত্নের পরিচয় পাওয়া যায়, বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় উভচরে এমন যত্নের উদাহরণ বেশি। উভচরের অপত্য যত্নকে প্রধান দুটি শিরোনামের অধীনে বর্ণনা করা হয়ঃ (ক) বাসা, আঁতুরঘর বা আশ্রয় নির্মাণের মাধ্যমে যত্ন এবং (খ) পরিবহনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ যত্ন। ডিম বা লার্ভা
নিচে গ্লেডিয়েটর ব্যাঙ নামে পরিচিত দক্ষিণ আমেরিকার (Hypsiboas rosenbergi) গেছো ব্যাঙের অপত্য যত্নের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো।
কাদা-মাটির নীড় (mud-nest) নির্মাণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার উদ্দেশে বসতির আশেপাশে পুকুর, ডোবা বা ধরনের স্থায়ী জলার পাড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। জননকালে পুরুষ ব্যাঙ এমন এক জায়গা বেছে নেয় যাতে গর্তখোঁড়া সহজ হয়, নির্মাণ কাজ রাতারাতি সম্পন্ন হয়। বাসা নির্মাণ, সে বাসা স্ত্রী ব্যাঙের পছন্দ হওয়া এবং নিরাপত্তা বিধান সবকিছু মাথায় রেখে স্ত্রী ব্যাঙ ডিম পাড়ে। অতএব বাসা নির্মাণকে প্রাধান্য দিয়ে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়পুরুষ ব্যাঙকে। এ ক্ষেত্রে পুরুষ ব্যাঙ তিন উপায়ে বাসা নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রথমত সে নিজেই বাসা বানায়, দ্বিতীয়ত পানি ভর্তি অগভীর গর্তকে সামান্য মেরামত করে বাসায় পরিণত করে; এবং তৃতীয়ত অন্য এক পুরুষ ব্যাঙের নির্মিত বাসা দখল করে নেয়। এখানে আলোচ্য গ্লেডিয়েটর পুরুষ ব্যাঙ সাধারণত বেলে বা কাদামাটিতে আগে থেকে কোনো কারণে সৃষ্টি হওয়া গর্তকে দ্রুত বাসা বানিয়ে ফেলে। আগের জনন ঋতুতে ব্যবহৃত বাসাকে ডিম পাড়ার উপযোগী করেও কাজে লাগাতে পারে । গবাদি পশু হেঁটে গেলে জলার কিনারে যে গর্ত হয় সেটাকেও একটু বড়সড় ও মসৃণ করে ডিম পাড়ার উপযোগী করে নিতে পারে।
পুরুষ ব্যাঙ গর্ত খুঁড়তে গিয়ে এমনভাবে মাটি সরায় যাতে মাটি স্তূপাকারে পড়ে গেলে কিনারার রূপ নেয়। গর্ভের ব্যাস প্রায় ১২-৩৭২ সেন্টিমিটার, আর ৫-৭ সেন্টিমিটার গভীর । তিরিশ মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে বাসা নির্মাণ সমাপ্ত হয় । বাসা নির্মাণ সম্পন্ন হলে পুরুষ ব্যাঙের ডাকে স্ত্রী ব্যাঙ সাড়া দিলেও বাসা ঘুরে-ফিরে দেখে পছন্দ হলে তবেই ডিম ছাড়তে উদ্যত হয়। ডিম ফুটে লার্ভা নির্গত হলে ওদের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, নিরাপত্তা বজায় থাকে সবদিক বিবেচনা করে স্ত্রী ব্যাঙ সিদ্ধান্ত নেয়। ডিম ছাড়ার পর এলাকাভেদে পুরুষ ব্যাঙ তার বংশ রক্ষায় তৎপর থাকে। যেখানে বাসা তৈরির জায়গা কম কিন্তু পুরুষ ব্যাঙের সংখ্যা বেশি থাকে সে সব জায়গায় আগ্রাসী বা সন্ত্রাসী পুরুষ ব্যাঙ অন্য ব্যাঙের বাসা দখল করে স্ত্রী ব্যাঙকে ডিম ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করে। অবস্থা বুঝে পুরুষ ব্যাঙ শক্ত হাতে বাসা রক্ষা করে। লার্ভা তরুণ ব্যাঙে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত গর্তের পাশে থেকে পাহাড়া দেয়।
গ্রেডিয়েটর ব্যাঙে মার্চ-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জননকাল হিসেবে পরিচিত। স্ত্রী ব্যাঙ উপযুক্ত বাসায় ১০ মিনিটের মধ্যে প্রায় তিন হাজার ডিম ছাড়ে। দুই তিন দিনের মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা নির্গত হয়। চল্লিশ দিনের মধ্যে এদের রূপান্তর ঘটে।
পাখির অপত্য যত্ন
পাখি মাত্রই অপত্য যত্নে সমৃদ্ধ প্রাণী। সুস্পষ্ট ও সুশৃঙ্খল অপত্য যত্নে পাখি একটি বৈশিষ্ট্যমন্ডিত প্রাণিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত। কোনো প্রাণীর জনন সাফল্য নির্ভর করে সুস্থ-সবল সন্তানকে প্রকৃতির বুকে স্বাবলম্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। অন্যদিকে, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে প্রত্যেকটি প্রাণী সম্বন্ধে তার বাস্তুগত ও প্রজননিক যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা রাখা। এখানে ছোট পানকৌড়ি সংক্ষেপে পানকৌড়ি (Little cormorant, Phalacrocorax niger) পাখির অপত্য যত্নের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো ।
বাংলাদেশে পানকৌড়ির জননকাল মে-অক্টোবর। তবে জুলাই-আগস্ট মাসে নীড় বাঁধার হার সবচেয়ে বেশি হয়। জননকালে এদের গায়ের ও মুখমন্ডলের পালকের রংয়ে পার্থক্য দেখা দেয়। পানকৌড়িরা যেখানে বাসা বাঁধে সেখানে ছোট বক (Egretta garzetta) ও কানি বক (Ardeola grayit)-ও বাসা বাঁধে। প্রধানত আম ও বট গাছ, সঙ্গে কড়ই, শেওড়া গাছেও বাসা বাঁধে। পানির ধারে ও সহজে মানুষের হাতের নাগালে পাওয়া যায় না এমন উচ্চতায় (৬-১০ মিটার) বিভিন্ন গাছের খড়কুটা দিয়ে অর্থাৎ বাসা বাঁধার জায়গার আশেপাশে যে সব খড়কুটা পাওয়া যায় তা দিয়ে জোড়ের উভয় সদস্য বাসা বাঁধে। বাসার গড় ব্যাস প্রায় ১৫ সে.মি., গভীরতা প্রায় ৫.৫ সে.মি.। দলবেঁধে বাসা বানানোয় অন্য কোনো ক্ষতিকর প্রাণী সহজে কাছে যাওয়ার সাহস পায় না। কাছে গেলেও সমবেত চিৎকারে পালিয়েযায় । পাঁচ থেকে এগারো দিনের মধ্যে বাসা বাঁধা শেষ হলে পানকৌড়ি একদিন পর পর ২-৬ টি সাদা বা নীলচে-সাদা ডিম পাড়ে। তবে প্রথম ডিম পাড়ার পর পরই ডিমে তা দিতে শুরু করে। স্ত্রী-পুরুষ উভয় সদস্যই তা' দেয়ার কাজ ভাগাভাগি করে নেয় । দু'তিন সপ্তাহের মধ্যে ডিম ফুটে শাবক বেরিয়ে আসে।
পানকৌড়ি শান্তশিষ্ট পাখি। দলবদ্ধ থাকায় শিকারী পাখির হামলা প্রতিরোধ সহজ হয়। কিন্তু দুরন্ত কিশোরদের মোকাবিলা করা সম্ভব হয় না। ডিম ও শাবক নষ্ট হওয়ার প্রধানতম কারণ হচ্ছে খেলাচ্ছলে বা ঘরে পোষার জন্য শাবক চুরি, আর খাওয়ার জন্যে ডিম চুরি। প্রচন্ড ঝড়-তুফানেও ডিম ও শাবকের ক্ষতি হয়। এ প্রতিকূল পরিবেশেও শাবকদের যত্ন নেওয়ার কাজে স্ত্রী-পুরুষ উভয় পাখি যথাসাধ্য সচেষ্ট থাকে। শুধু তাই নয়, শাবকের শরীর প্রথম সাত দিন একেবারে নগ্ন থাকে । শরীরের সংবেদনশীল ত্বক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য বাসা নির্মাণের মাল-মসলার মধ্যে সরু আঁশ, শুকনো পাতা ইত্যাদি থাকে, সে সঙ্গে চলে বিরামহীন শাবকগুলোকে আগলে রাখার চেষ্টা করা। রাতে সারাক্ষণ স্ত্রী পাখি বাসায় বসে থাকে, পুরুষ পাখি বাসার কাছাকাছি ডালে বসে পাহাড়ায় থাকে। ১৫-২০ দিন পর্যন্ত পানকৌড়ি শাবকদের আগলে রাখে । এক মাসের মধ্যেই পানকৌড়ির শাবক নীড় ছেড়ে স্বাধীন জীবন যাপনে সক্ষম হয়ে উঠে।
শিখন (Learning)
যে প্রক্রিয়া একেক সদস্যের আচরণে অভিজ্ঞতার আলোকে অভিযোজনিক পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় সে প্রক্রিয়া শিখন নামে অভিহিত। মূলত পারিপার্শ্বিক কারণে অনুশীলন প্রক্রিয়ায় প্রাণীর আচরণে পরিবর্তন ঘটে।
অভ্যাসগত (Habituation)
অভ্যাসগত আচরণ হচ্ছে সরলতম ধরনের শিক্ষণ। এ ধরনের আচরণে কোনো পুরস্কার বা তিরস্কারের (শাস্তির) সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন একটি উদ্দীপনার ঘন ঘন পুনরাবৃত্তির ফলে আচরণগত সাড়াদানে ক্রমশ ভাটা পড়ে যায়, এক সময় প্রাণী ওই উদ্দীপনায় আর কোনো সাড়াই দেয় না। এ আচরণের মাধ্যমে প্রাণী নতুন পরিবেশে ক্রমান্বয়ে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে অভিযোজিত হয়। অভ্যাসগত আচরণে প্রাণী শুধু নতুন উদ্দীপনায় অভ্যন্তই হয় না, বরং কম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দীপনা বর্জনেও উদ্যোগী হয়।
যেমন- একটি পোষা কুকুরের উপস্থিতিতে শব্দ করলে কুকুরটি মাথা উঁচু করে সাড়া দেয়। যদি ঘন ঘন শব্দ সৃষ্টি করা হয় তখন আর তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। এ পরিবর্তন অবসাদগ্রস্ততার কারণে কিংবা সংবেদগ্রাহকগুলোর অভিযোজনের ফলে ঘটে না, বরং অভ্যাসজনিত কারণে ঘটে থাকে। এ সাড়াদান দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে, এমনকি সম্পূর্ণ অভ্যস্ত হলে প্রাণীটি ওই উদ্দীপনায় আর কখনওই সাড়া দেবে না। তা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর প্রয়োগ করলেও কাজ হবে না। প্রাণিজগতের তথা জীবজগতের সব গোষ্ঠীতেই, অভ্যাসগত শিক্ষণ আচরণ দেখা যায় । শস্যক্ষেতে আপদ পাখি তাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের সবখানে মাটির হাড়িতে রং মেখে যে ভয়াল চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয় তা দেখে আপদ পাখি কিছুদিন ভয়ে থাকে। পরে চলৎশক্তিহীন গড়নটিকে আর আমলে নেয় না, বরং ফিঙ্গে পাখির বসার জায়গা হয় (পোকা-মাকড় খাওয়ার জন্যে উড়তে সুবিধা হয়)। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও এমন ঘটনা ঘটে। রেলস্টেশনের পাশে অবস্থিত বাসা বাড়ীতে ট্রেনের শব্দে রাত যাপনের কথা অনেকে চিন্তাই করতে পারবে না, কিন্তু কিছুদিন বাস করলে ট্রেনের শব্দ বা হুইসেল কোনোটাই আর ঘুমের ব্যাঘাতের কারণ হবে না। এটাই অভ্যাসগত আচরণ। মাথার উপরে বিরক্তিকর শোঁ শোঁ শব্দে ঘুরতে থাকা ফ্যানের শব্দে আমরা এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বা আলোচনা সভা কোনটিতেই এর প্রভাব পড়ে না। এ আচরণের সমস্ত আদর্শ, বৈশিষ্ট্য ও পুনরুদ্ধার ( recovery) একটি নিউরোন ও নিউরোমাসক্যুলার সংযোগেও প্রদর্শিত হতে পারে।
অনুকরণ (Imprinting)
অনুকরণ অন্যতম শিক্ষণ আচরণ। এটি হচ্ছে প্রাণীর পরিস্ফুটনকালে তরুণ প্রাণীতে অত্যন্ত সংবেদনশীল ধাপে (critical period) একটি নির্দিষ্ট উদ্দীপনার প্রতি সৃষ্ট স্থায়ী আচরণ। ডিম ফুটে সদ্যসৃষ্ট হাঁসশাবক নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে হাটতে সক্ষম হলেই নীড় ছেড়ে কেবল মাকে অনুকরণ করে দূরে চলে যায়, অন্য কাউকে অনুসরণ করে না। কিন্তু ডিম যদি ইনক্যুবেটারে ফুটানো হয় কিংবা ডিমফুটে হাঁসশাবক বের হওয়ার পরপরই মা হাঁসকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে শাবকগুলো চোখ মেলে প্রথম যে বড় সচল বস্তু দেখবে তাকেই অনুসরণ করবে। তরুণ বয়সেও ওই সচল বস্তুকে অনুসরণ করে চলবে। তখন আসল মাকে ফিরিয়ে দিলেও 'নকল' মা-ই ওদের কাছে আসল বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ নকল মা-ই হাঁস শাবকদের কাছে আসল মা হিসেবে স্থায়ীভাবে মুদ্রিত হয়ে যাবে। এভাবে পরিস্ফুটনের মুহূর্তে কোনো সচল বস্তু, ব্যক্তি কিংবা গন্ধ ও উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করতে পারে। পরিস্ফুটনকালে সংবেদনশীল মুহূর্ত প্রজাতিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। এ সময়কাল জন্মের কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন বা মাস এমনকি কয়েক বছরও হতে পারে। তবে জন্মের পর পাখি বা স্তন্যপায়ীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালনের উদ্যোগ নিলে পোষ মানানো সহজ হয়। সার্কাসে পশু নিয়ে খেলা দেখানোর প্রাণিগুলোকে একারণে খুব কম বয়সে আসল মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় ।শুধু সচল বড় বস্তুই নয়, আগেই বলা হয়েছে যে, গায়ের গন্ধও শাবকরা অনুসরণ করে। চিকা (shrew) নামে পরিচিত গন্ধ মুষিকের শাবকেরা মায়ের গায়ের গন্ধে উদ্দীপ্ত হয়। বাচ্চাসহ কোথাও যেতে চাইলে মায়ের গা থেকে ক্ষরিত গন্ধে শাবকরা একজন আরেকজনের শরীর কামড়ে ধরে রেলের বগির মতো পরস্পরের পেছনে থেকে অগ্রসর হয়, মায়ের অবস্থান থাকে একেবারে সামনে। গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের পর ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে মুষিকশাবকেরা গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ৫-৬ দিন বয়সি শাবকদের যদি অন্য প্রজাতির মা-মুষিককে বিকল্প হিসেবে দেওয়া হয় তাহলে 'বিকল্প' বা 'নকল' মাকেই আসল মনে করে দিন কাটায়। দিন ১৫ পর যদি শাবকগুলোর কাছে আসল মাকে ফেরত দেওয়া হয় তাহলেও আর গৃহীত হয় না। কিন্তু বিকল্প মায়ের গায়ের গন্ধে মাখানো কাপড়ের টুকরাকেও তারা অনুসরণ করতে রাজী থাকে।
Pavlov এর তত্ত্বঃ
ইভান পিত্রোভিচ প্যাভলভ (Ivan Petrovich Pavlov, ১৮৪৯ - ১৯৩৬) ছিলেন একাধারে একজন বিখ্যাত রূশ 1 শারীরবিজ্ঞানী (Physiologist) ও মনোবিজ্ঞানী (Phychologist)। সাপেক্ষ প্রতিবর্ত (conditioned reflex) সম্বন্ধে তিনি যুগান্তকারী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কুকুরের দেহে কিভাবে এসব প্রতিবর্ত সৃষ্টি হয় ও কাজ করে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেন। ১৯০৪ সালে তিনি শারীরবিজ্ঞান বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
বিজ্ঞানী প্যাভলভ প্রতিবর্ত ক্রিয়াকে দুভাগে ভাগ করেছেন : (১) অনপেক্ষ (unconditioned) এবং (২) সাপেক্ষ(conditioned) প্রতিবর্ত ক্রিয়া।
অনপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া সহজাত বা জন্মগত এবং কোনো শর্তের অধীন নয়। অন্যদিকে, সাপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া সহজাত নয়, বারংবার অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জিত হয়, এবং শর্তের অধীন। কুকুরের লালা ক্ষরণের সাপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিজ্ঞানী প্যাভলভ।
বিজ্ঞানী প্যাভলভ কুকুরের দেহে পরিপাকের শারীরবৃত্ত নিয়ে গবেষণা করেন। কুকুরদের খাওয়া পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলেন গবেষণাগারের নির্দিষ্ট টেকনিশিয়ান। প্যাভলভ লক্ষ করলেন শুধু খাবার দেখলেই কুকুরের লালাক্ষরণ হতো না, যে টেকনিশিয়ান খাবার পরিবেশন করতেন তাঁর গায়ের সাদা গবেষণা কোট (lab-coat) দেখলেই লালাক্ষরণ শুরু হয়ে যেত। এ পর্যবেক্ষণ থেকে প্যাভলভ ধারণা করেন যে খাবার দেওয়ার সময় সুনির্দিষ্ট উদ্দীপনা যদি কুকুরের চারপাশে থাকে তাহলে সেই উদ্দীপনা খাবারের সঙ্গে মিশে গিয়ে কুকুরের লালাক্ষরণকে উদ্দীপ্ত করে। এ উদ্দীপনাকে তিনি মানসিক উদ্দীপনা (psychic stimulation) নামকরণ করেছেন। প্রাথমিক এ ধারণার ভিত্তিতে প্যাভলভ প্রকৃত গবেষণায় নিয়োজিত হন।বিজ্ঞানী প্যাডলত গবেষণার খাতিরে একটি ক্ষুধার্ত কুকুরকে বিশেষভাবে নির্মিত শক্ত মঞ্চে দাঁড় করিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বেল্ট লাগিয়ো দিলেন যেন কোনো অসুবিধা না হয়। বিশেষ প্রক্রিয়ায় লালা নালির সঙ্গে একটি নলের সংযোগ করে দেওয়া হলো। খাবার হিসেবে মাংসম্পূর্ণ দেওয়ার পর তিনি লালাক্ষরণের পরিমাণ রেকর্ড করে রাখেন। সঠিক পরিমাণ মাংসচূর্ণ মুখে গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ লালা ক্ষরণ হতে দেখা যায়। প্যাভলভ ক্ষুর্ধাত কুকুরের মুখে মাংসচূর্ণ দেওয়ার ঠিক আগমূহূর্তে ঘন্টা বাজান। প্রথম দিকে বেশ কয়েকবার (১২বার) সমলয়ে ঘন্টাধ্বনি শোনানো ও মাংসচূর্ণ সরবরাহের পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্ততঃ ১২ বার ঘন্টাধ্বনির পর উদ্দীপনার প্রতি সাড়া পাওয়া গেছে। তখন শুধু ঘন্টাধ্বনি শুনলেই কুকুরের লালাক্ষরণ শুরু হয়েছে। ঘন্টাধ্বনির সঙ্গে এমন সামঞ্জস্য রচিত হলো যে মাংসম্পূর্ণ না দিয়ে প্যাভলভ যতবার ঘন্টা বাজিয়েছেন ততবারই কুকুরে লালাক্ষরণ হয়েছে। ক্ষরণের পরিমাণ শুধু মাংসচূর্ণ দিলে যতোখানি হয় ঠিক ততোখানি ।
উপরোক্ত গবেষণার আলোকে প্যাভলোডিয়ান কন্ডিশনিং (Pavlovian conditioning) বা চিরায়ত সাপেক্ষণ (classical conditioning)-কে সংক্ষেপে নিম্নোক্তভাবে উপস্থাপন করা যায়।
১. এমন অনেক বিষয় আছে যা একটি কুকুরের জানার প্রয়োজন নেই- এ ধারণা থেকে প্যাভলভ তাঁর গবেষণা শুরু করেন। যেমন - যখন আহার দেখবে তখন লালাক্ষরণ করবে এমন বিষয় শেখার দরকার নেই। এ প্রতিবর্ত কুকুরে নিহিত আছে। এটি একটি অনপেক্ষ সাড়া (unconditioned response, অর্থাৎ উদ্দীপনা-সাড়াদান শেখার বিষয় নয়)।
২. প্যাভলভ আবিষ্কার করেন যে খাবারের সঙ্গে এমন কিছু (যেমন- গবেষণা টেকনিশিয়ান) জড়িত রয়েছে যা অনপেক্ষ সাড়াদানকে উসকে দেয়।
৩. গবেষণা টেকনিশিয়ানের সাদা ল্যাব-কোট প্রথমে নিরপেক্ষ উদ্দীপনা (neutral stimulus) ছিল। কারণ এটি কোনো সাড়া (response) সৃষ্টি করেনি। কিন্তু ল্যাব-কোট গায়ে দেওয়া মানুষটি (নিরপেক্ষ উদ্দীপনা) খাদ্যরূপী অনপেক্ষ উদ্দীপনার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে।
৪. প্যাভলভ তাঁর গবেষণায় একটি ঘন্টাকে নিরপেক্ষ উদ্দীপনা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি কুকুরকে খাবার দেওয়ার ঠিক পূর্বমুহূর্তে ঘন্টা বাজাতেন।
৫. দেখা গেল, অনেকবার পুনরাবৃত্তির পর কুকুরটি ঘন্টাধ্বনি ও খাদ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত এক নতুন আচরণে শিক্ষিত হয়েছে। যেহেতু সাড়াটি শিক্ষণজনিত (বা সাপেক্ষ) তাই একে সাপেক্ষ সাড়া (conditioned response) বলে। এভাবে নিরপেক্ষ উদ্দীপনা অনপেক্ষ উদ্দীপনার সঙ্গে মিলিত হয়ে সাপেক্ষ উদ্দীপনা (conditioned stimulus)-য় পরিণত হয়েছে।
অ্যালটইজমঃ চাকের প্রত্যেক সদস্য নিজের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে অন্য সদস্যদের কল্যাণে একমনে কাজ করে যায়। সমাজের সদস্যদের এমন মনোভাবকে পারস্পরিক সহযোগিতা বা পরার্থিতা বা অ্যালটইজম (altruism) বলে।
প্রত্যেকটি মৌচাকে মৌমাছিরা বসতিবন্ধ হয়ে একটি বড় পরিবার বা সমাজ গড়ে বাস করে। আকার-আকৃতি ও কাজের ভিত্তিতে পুরুষ মৌমাছি ; এবং ৩। কর্মী মৌমাছি বা বন্ধ্যা মৌমাছি।
মৌমাছিরা তিন সম্প্রদায়ে বিভক্তঃ ১। রাণী মৌমাছি যা একমাত্র উর্বর মৌমাছি; ২। ড্রোন বা
একটি মাত্র রাণীর নেতৃত্ব কয়েকশ' ড্রোন (বা পুরুষ মৌমাছি) এবং ঋতুভেদে ১০-৮০ হাজার কর্মী মৌমাছি (বন্ধ্যা স্ত্রী মৌমাছি) যে সুশৃংখল উপায়ে নীরবে নিভৃতে সামাজিক দায়িত্ব পালন করে চলেছে তা লক্ষ বছর ধরে মানুষ জানবার চেষ্টা করেছে। তাদের এ মাতৃতান্ত্রিক সমাজে ব্যবস্থা মৌমাছি গোষ্ঠীর সকল মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে প্রাণিজগতে অনন্য নজির স্থাপন করেছে।